"আইনস্টাইনের কাল"
E=mc^2 সূত্রটি দেখলে সহজাই যে প্রতিভাবান মানুষটির নাম আমাদের চোখে ভাসে তিনি হচ্ছেন আলবার্ট আইনস্টাইন।তাঁর E=mc^2 সূত্রটি পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় সূত্র।
"আইনস্টাইনের কাল"বইয়ে লেখক প্রদীপ দেব খুব সহজ-সরল আর সাবলীল ভাষায় তুলে ধরেছে শতাব্দীর সেরা এই মানুষটির জীবন ও কর্ম।
৫ বছর বয়সে বাবার কিনে দেওয়া কম্পাস যে আগ্রহ সৃষ্টি করেছে তা মৃত্যু অবধি রয়ে গিয়েছিলো অজানাকে জানতে।জীবনের শেষ গবেষণা পত্র ছিলো-"A New Form of the General Relativistic Field Equations".যেখানে তাঁর জেনারেল রিলেটিভিস্টিক ফিল্ড ইকোয়েশনের একটি নতুন রূপ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
১১ বছর বয়সে যে, ধর্মের প্রতি মুগ্ধ হয়ে একজন নিষ্টাবান ইহুদি হতে চেয়েছিলেন কিন্তু দার্শনিক ইমানুয়েল কান্টের লেখা " দি ক্রিটিক অফ পিওর রিজন"(The Critique of Pure Reason) পড়ে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেললেন মাত্র ১৩ বছর বয়সেই।
মিলিটারি রাষ্ট্রের প্রতি আগ্রহ ছিলো নাহ কখনোই তাই জার্মান নাগরিকত্ব ত্যাগ করে সুইজারল্যান্ডের নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন এবং আমৃত্যু সামরিকায়নের বিপক্ষে কথা বলে গেছেন।
প্রতিভাবান হয়েও গ্রাজুয়েশন শেষে প্রথম জীবনে বারবার ব্যর্থ হয়েছেন চাকুরির চেষ্টায়।জীবিকা শুরু করেছে থার্ড ক্লাস টেকনিক্যাল এক্সপার্ট হিসেবে এক প্যাটেন্ট অফিসে।
এরপরের গৌরবোজ্জ্বল জীবনের কথা কমবেশি সকলেরই জানা।জুরিখ ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক, জার্মান ইউনিভার্সিটির বিভাগীয় চেয়ারম্যান, কখনো ইনিস্টিটিউটের ডিরেক্টর,নিজের গ্রাজুয়েট কলেজ পলিটেকনিকের প্রফেসর, জার্মান ফিসিক্যাল সোসাইটির চেয়ারম্যান, হল্যান্ড ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং প্রফেসরসহ আরও অনেক প্রেস্টিজিয়াস পদে অলংকৃত হতে থাকেন স্বমহিমায় নিজ প্রতিভা বলে।
প্রথম দিকে শিক্ষক হিসেবে একেবারে নিম্নমানের ছিলেন।ধীরেধীরে প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মের বাইরে গিয়ে নিজের মত করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়া শুরু করেন।জনপ্রিয় হয়ে উঠেন শিক্ষার্থীদের মাঝে।
ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন লিবারেল , গুরুত্ব দিয়ে গেছেন নিজের পছন্দ, ভালো লাগার বিষয় গুলোকে। এক্ষেত্রে কোন আপোস ছিলো নাহ।নারী সান্নিধ্য সবসময়ই প্রিয় ছিলো,তাদের সাথে মিশতে খুব পছন্দ করতো।মিলেইভা ছিলো প্রথম ওয়াইফ, পলিটেকনিকের স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় সবসময়ের সঙ্গী ছিলো মিলেইভা।এলসা সেকেন্ড ওয়াইফ।
প্যালেস্টাইন ভূ-খণ্ডে ইহুদিদের জন্যে আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আইনস্টাইনের ভূমিকা ছিলো অপরিসীম। হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তারঁ অবদান অনস্বীকার্য। পরবর্তীতে তিনি তাঁর সব গবেষণা পত্র হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে উইল করে যান।
পরপর দুটা বিশ্ব যুদ্ধ প্রত্যক্ষকারী আইনস্টাইন সারা জীবন ছিলেন যুদ্ধের বিপক্ষে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির আগ্রাসী মনোভাব এবং পারমানবিক অস্ত্র তৈরী করতে পারে এমন সম্ভবনায় তিনি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে পারমানবিক বোমা তৈরীর জন্য আহ্বান জানান কিন্তু পরবর্তীতে তিনি তাঁর ভূল বুঝতে পারেন,বাকি জীবনে তিনি পারমানবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণে জোড়ালো ভূমিকা পালন করেন।
১৯২১ নোবেল কমিটি একপ্রকার বাধ্য হয়েই তাঁকে ফটোইলেকট্রনিক ইফেক্টের উপর গবেষণার জন্য নোবেল প্রাইজ দেয় কেননা তাঁকে নোবেল প্রাইজ নাহ দিলে নোবেল কমিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠে এই ভেবে।
ইসরায়েলের প্রথম রাষ্ট্রপতি ওয়েইজম্যানের মৃত্যুর পর আইনস্টাইনকে ইসরায়েলের রাষ্ট্রপতি হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয় কিন্তু তিনি অস্বীকৃতি জানান।
টাইম ম্যাগাজিন মতে বিংশ শতাব্দীর সেরা মানুষ আলবার্ট আইনস্টাইন।বিশ্বের বিজ্ঞানীদের ভোটে সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানী নির্বাচিত হোন আলবার্ট আইনস্টাইন। আইনস্টাইনের তত্ত্বের শত বর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে ২০০৫ সালকে আন্তর্জাতিক পদার্থ বিজ্ঞান বর্ষ ; আইনস্টাইন বর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে।
করোনা কালের এই ঘর বন্দী সময়ে একবার পড়ে দেখতে পারেন, লেখক প্রদীপ দেবের লেখা " আইনস্টাইনের কাল" বইটি। আইনস্টাইনকে জানার পাশাপাশি উৎসাহী হয়ে উঠতে পারেন অজানাকে জানার কিংবা বিজ্ঞানের আধুনিক গবেষণায় নিজেকে সম্পৃক্ত করায়।
ব্যক্তিগত রেটিং ১০/১০
হ্যাপি রিডিং 💙
Comments
Post a Comment